নির্মাণকাজের কারণে বায়ুদূষণ দেখা দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, পরিবেশ রক্ষায় তাদের কাজ পুরোপুরি সম্পাদনের জন্য ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্প কর্তৃপক্ষকে চূড়ান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে।
ইউএনবির সাথে সাক্ষাৎকারে মো. শাহাব উদ্দিন হতাশা প্রকাশ করে বলেন, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হলেও নির্মাণকাজের ফলে সৃষ্ট বায়ুদূষণ হ্রাস করার নির্দেশনা তারা অনুসরণ করছে না।
মন্ত্রী আরও বলেন, সম্প্রতি মেট্রোরেল প্রকল্পের সাথে জড়িতদের পরিবেশ অধিদপ্তরে (শুনানি) তলব করা হয়েছিল, তারপরও বায়ুদূষণের মাত্রা অপরিবর্তিত রয়েছে।
বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে পরিবেশ সংরক্ষণের মতো বিষয়গুলো ইচ্ছাকৃতভাবে অবহেলিত স্বীকার করে শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘ছোট বা বড় প্রকল্প যাই হোক না কেন, পরিবেশ রক্ষার জন্য যে নিয়ম রয়েছে তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।’
বায়ুদূষণ কমাতে গৃহীত ব্যবস্থার রূপরেখা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আরও বেশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
তবে তিনি স্বীকার করেন যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য তাদের জনবলের অভাব রয়েছে। ‘আদালতের আদেশ হওয়ার সাথে সাথে আমরা আমাদের জনশক্তি বৃদ্ধি করছি এবং এখন আরও বেশি অভিযান পরিচালনা করা হবে’, যোগ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম দেশব্যাপী সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সরকার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবেশ অধিদপ্তরের বর্তমানে অবস্থিত বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় ছাড়াও নতুনভাবে রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়সহ ৪৩টি জেলায় জেলা অফিস স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে।
ঢাকা শহরের অসহনীয় বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ দরকার জানিয়ে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্হার সাথে বসে কাজ করার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, বায়ুদূষণ রোধে আমরা ঢাকাসহ বড় বড় জেলা শহরে বায়ুর মান নিরূপণের জন্য ক্যাম্প স্থাপন করেছি। পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকাসহ বিভাগীয় শহর ও শিল্পঘন শহরে সার্বক্ষণিক বায়ুর গুণগত মান পরিমাপ করা হচ্ছে। পরিমাপকৃত বায়ুর গুণগত মান বিশ্লেষণ করে দেখা যায় শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ২০০২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বায়ু মানের উপাত্ত পর্যালাচনা করে দেখা যায়, ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ এই তিনবছর বায়ুর মান বেশি খারাপ হয়েছে। ঢাকায় বিভিন্ন বড় বড় অবকাঠামোগত কাজ বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি হচ্ছে। এছাড়া বায়ুদূষণের উৎস হচ্ছে ইটভাটা, রাস্তা, যানবাহন, খোড়াখুড়িসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ ও সিটি করপোরেশনের বর্জ্য।
‘ইটভাটার জন্য ঢাকার চারপাশে ৫৮ ভাগ বায়ুদূষণ হয়। আইনের আওতায় পরিবেশ অধিদপ্তর দেশে বিদ্যমান ইটভাটাগুলোকে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব উন্নত প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত করতে কাজ শুরু করেছি,’ মন্ত্রী ইউএনবিকে জানান।
তিনি বলেন, ২০২৫ সালের পর পর্যায়ক্রমে বেসরকারিভাবে সকল অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ব্লক ইট ব্যবহার বাস্তবায়ন করা হবে।
শাহাব উদ্দিন বলেন, এ পর্যন্ত দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ ইটভাটা পরিবেশ বান্ধব আধুনিক প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এটাকে আমরা ১০০ ভাগে উন্নিত করব।
তিনি বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন ( নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী মাটির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে হ্রাস করার উদ্দেশ্যে সকল সরকারি নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে ব্লক ইট বাধ্যতামূলক করতে ২০১৯-২০২০ সালে ১০ শতাংশ ব্লক ইট এবং পর্যায়ক্রমে এটি ২০২৫ সালে ১০০ ভাগে ব্লক ব্যবহার করা হবে। তবে এটি সড়ক ও মহাসড়কের বেইজ ও সাব-বেইজ নির্মাণ ও সংস্কারে বাধ্যতামূলক হবে না।
শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, ইটভাটার সংখ্যা বেড়ে ৭ হাজার ৯০২ হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৮৭টি ইটভাটা ঢাকা বিভাগের মধ্যে গড়ে উঠেছে। ওই গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে দেশে মোট যানবাহনের পরিমান ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৭। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয় ৬ লাখ ১৯ হাজার ৬৫৪৷
মন্ত্রীর মতে, বায়ুদূষণের আরেকটি কারণ যানবাহনের কালো ধোঁয়া। এটিও দিন দিন বাড়ছে। গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে। ‘আমরা পরিকল্পনা করেছি গাড়ির কালো ধোঁয়া যেকোনো মূল্যে কমাব। আমরা বিআরটিএসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় এটি বন্ধ করব।’
‘বায়ুদূষণ রোধে দুই সিটি করপোরেশনকে আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে আমরা বলেছি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানসমূহ নির্মাণ সামগ্রী অর্থাৎ মাটি ও বালি পরিবহনের সময় এসবের একটি অংশ রাস্তার ফেলে যাচ্ছে, যা পরবর্তীতে বায়ুদূষণের সৃষ্টির জন্য বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছে,’ শাহাব উদ্দিন বলেন।
তিনি বর্জ্য দূষণের পিছনে আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনা ও পরিবহন ব্যবস্থাকেও দায়ী করেন।
মন্ত্রী বলেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত পরিবেশ দূষণের দায়ে ১ হাজার ৬৯৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠান/প্রকল্প/ব্যক্তির বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম গ্রহণ করে ২০ কোটি ২২ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে।
‘অপরদিকে একই সময়ে পরিবেশগত বিভিন্ন অপরাধ (অবৈধ পলিথিন, ইটভাটা, পাহাড় কর্তন, জলাশয় ভরাট, নির্মাণ সামগ্রী, অতিরিক্ত দূষণ প্রভৃতি) এর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা জরিমানা এবং ৪৫৯টি অবৈধ ইটভাটা আংশিক ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে,’ তিনি যোগ করেন।